আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৫
জম্মু-কাশ্মিরে এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে চীন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোববার (২৭ এপ্রিল) পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তারা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসহাক দার চীনা মন্ত্রীকে বর্তমান আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। উভয় নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং একতরফা ও আধিপত্যবাদী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অটল রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইসলামাবাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। উভয় দেশ নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় গভীর সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
চীন ছাড়াও পাকিস্তান সৌদি আরব, ইরান ও মিসরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে।
গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ ভারতীয় পর্যটক এবং এক নেপালি নাগরিক নিহত হন। এই ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বুধবার ভারত বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ইসলামাবাদ থেকে ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার এবং হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা কমানো।
জবাবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) জরুরি বৈঠকের পর প্রায় একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ। পাকিস্তান আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, সিন্ধু নদীর পানির প্রবাহে কোনো হস্তক্ষেপকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে গণ্য করা হবে এবং ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে।
নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ছোট আকারের গোলাগুলির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। জাতিসংঘ উভয় দেশকে “সর্বোচ্চ সংযম” প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জম্মু-কাশ্মিরে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে, সন্ত্রাসবাদ এবং অশান্তির ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, সিন্ধু পানি চুক্তির স্থগিতকরণ পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে, কারণ দেশটির কৃষির ৯০% এই নদী ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তবে, কেউ কেউ মনে করেন, এই পদক্ষেপ ভারতের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ চীন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহে বাধা দিতে পারে, যা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্নভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই সংকটের দিকে তাকিয়ে আছে।
এ.আই/এম.আর