Sunday, April 27, 2025

ইরানের শহীদ রাজিতে বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৪০, আহত ১০০০-এর বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২২:৩৪
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর শহীদ রাজিতে শনিবার (২৬ এপ্রিল) সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। রোববার হরমুজগান প্রদেশের একজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
হরমুজগান প্রদেশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশৌরি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিস্ফোরণটি বন্দরের ওয়ার্ফ এলাকায় একাধিক কনটেইনারে সংরক্ষিত রাসায়নিক পদার্থের কারণে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি তৈরির উপাদান সোডিয়াম পারক্লোরেট থাকতে পারে।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে ভবনের জানালা ভেঙে গেছে এবং ২৬ কিলোমিটার দূরে কেশম দ্বীপে এর শব্দ শোনা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর প্রচণ্ড আগুনের লেলিহান শিখা এবং ঘন কালো ধোঁয়া বন্দর এলাকা থেকে উঠছে। লোকজন প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাচ্ছে, আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। এখনও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং বিস্ফোরণের কারণ তদন্তের জন্য সরকারি নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস্কান্দার মোমেনিকে বন্দর আব্বাসে পাঠিয়েছেন তদন্ত তদারকি এবং অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। হরমুজগান প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এবং বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে স্কুল ও অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। জনগণকে ঘরের মধ্যে থাকতে এবং বাইরের কার্যক্রম এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শহীদ রাজি বন্দরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত এবং বছরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন টন পণ্য পরিচালনা করে, যা ইরানের সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ইরানি তেল শোধনাগার ও বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে, বিস্ফোরণে তাদের তেল শোধনাগার, জ্বালানি ট্যাঙ্ক বা পাইপলাইনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দাহ্য পদার্থের অবহেলাজনক ব্যবস্থাপনা এবং রাসায়নিক পদার্থের অনিরাপদ সংরক্ষণ এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হতে পারে। ইরানের সংকট ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন জাফারি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষকে আগেই রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। কিছু সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মার্চে চীন থেকে আনা ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানির রাসায়নিক পদার্থ এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামরিক পণ্যের সংশ্লিষ্টতার খবর অস্বীকার করেছে।
এই বিস্ফোরণ ঘটে যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ওমানে তৃতীয় দফা পারমাণবিক আলোচনায় ব্যস্ত ছিল, তবে এই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, যদিও ২০২০ সালে এই বন্দরে ইসরায়েলের দায়ী করা একটি সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় এই ঘটনা ২০২০ সালের বৈরুত বন্দর বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, কারণ এর মাত্রা এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য জড়িত থাকার কারণে। ইরান হরমুজগান প্রদেশে তিন দিনের সরকারি শোক ঘোষণা করেছে, এবং দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক শিল্প দুর্ঘটনার শোকে মুহ্যমান।

এ.আই/এম.আর

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.