জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২২:৫৯
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা এলাকায় গ্রাম-মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি নামক এনজিওর মাধ্যমে গ্রাহকদের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে পলাতক হয়েছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বছরের পর বছর চেষ্টা করেও তাদের মূল টাকা বা লভ্যাংশ ফেরত পাননি। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অসংখ্য গ্রাহক তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছেন।
জামশা, জামির্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, তালেবপুর এবং জয়মন্টপ ইউনিয়নের হাজারো গ্রাহক এই কেলেঙ্কারির শিকার। টাকা ফেরত চাওয়ার সময় তারা হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। ফলে, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রোববার সকালে জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা এলাকায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর করেন।
২০০১ সালে যৌথ মালিকানায় নিবন্ধিত এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি গঠন করেন জামশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল এবং আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুল্লাহ। হাবিবুল্লাহর মৃত্যুর পর বাকি তিন নেতা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার (৩৩), যিনি দুই কিডনির জটিল রোগে ভুগছেন, জানান, চিকিৎসার জন্য তার স্বামী গরু-বাছুর ও জমি বিক্রি করেন। তিনি তিন বছর আগে ১০ লাখ টাকা সমবায়ে জমা রাখেন। তিনি বলেন, “তাদের পায়ে ধরেছি, কিন্তু কিছুই পাইনি। আমার পরিবার নিঃস্ব।”
প্রবাসী সেলিম মিয়া (৩০) অভিযোগ করেন, এই চক্র শত কোটি টাকা পাচার করে দুবাইতে ব্যবসা শুরু করেছে। তিনি বলেন, “এটা পূর্বপরিকল্পিত প্রতারণা।” চারিগ্রামের সাবিনা বেগম (৪৫) জানান, ২০০৬ সালে ১০ লাখ ও ২০১৮ সালে আরও ১০ লাখ টাকা জমা রাখেন। দ্বিতীয়বারের টাকার পর থেকে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ হয়, ফলে তার সংসারে অশান্তি তৈরি হয়েছে।
অভিযুক্ত নেতাদের এলাকায় পাওয়া যায়নি। গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, তার স্বামী ৮-৯ কোটি টাকার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, বিনিয়োগের মুনাফা আসলে তিন-চার বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিতে পারে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় মানিকগঞ্জে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফেরত ও ন্যায়বিচার দাবি করছেন।
এ.আই/এম.আর