ঢাকা: বাংলাদেশে চাকরি সৃষ্টি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক ৮৫ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে। এই অর্থ বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প এবং স্ট্রেন্থেনিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর ইম্প্রুভড রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন, অ্যান্ড টার্গেটিং (এসএসপিআইআরআইটি) প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস জানায়, এই চুক্তি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী, এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন** নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার উপস্থিত ছিলেন।
বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প ৬৫ কোটি ডলার ব্যয়ে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্র বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় কমানো এবং পণ্য পরিবহনের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হবে। উন্নত অবকাঠামোর ফলে বৃহত্তর জাহাজের আগমন সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করবে।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে এবং প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে, এই অবকাঠামো উন্নয়ন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে কারণ বন্দরের পরিচালনায় নারী কর্মীদের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
স্ট্রেন্থেনিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর ইম্প্রুভড রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন, অ্যান্ড টার্গেটিং (এসএসপিআইআরআইটি) প্রকল্প – ২০ কোটি ডলার ব্যয়ে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ নগদ অর্থ ও জীবিকা সহায়তা পাবে, বিশেষ করে যুব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের শ্রমিকরা।
প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আধুনিক জাতীয় সামাজিক রেজিস্ট্রি** তৈরি করা হবে, যা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে এবং তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, এই উদ্যোগ দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, ক্ষুদ্রঋণ এবং পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা অর্জনে সহায়ক। এই প্রকল্পগুলো জলবায়ু স্থিতিশীলতা এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
বিশ্বব্যাংকের গেইল মার্টিন বলেন, “বাংলাদেশকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে থাকতে হলে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী প্রায় ২০ লাখ যুবকের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এই আর্থিক প্যাকেজটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাণিজ্য ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এ আই/এম.আর