ইন্টারন্যাশনাল : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কঠোর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, আকাশসীমা এবং স্থল সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের পাশাপাশি তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের বাণিজ্য বন্ধ করেছে। এছাড়া, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ এবং ওয়াগাহ সীমান্ত তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
পেহেলগাম হামলার পর বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা হ্রাস এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ। এছাড়া, পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাকে পাকিস্তান তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে। পাকিস্তানকে বরাদ্দকৃত পানি প্রবাহে বাধা দেওয়া বা চুক্তি লঙ্ঘনকে যুদ্ধের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।” ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সিন্ধু নদী ও এর উপনদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে, যা দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াগাহ সীমান্ত দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ ডলারের পণ্য, যেমন সিমেন্ট, টেক্সটাইল ও কৃষিপণ্য বিনিময় হয়। তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার বন্ধ হলে ভারতের আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইসলামাবাদের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই বিপজ্জনকভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
জাতিসংঘ উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি, তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
এ.আই/এম.আর
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি বড় যুদ্ধ এবং অসংখ্য সংঘর্ষ হয়েছে, বিশেষত কাশ্মীর ইস্যুতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশ সতর্কতার সঙ্গে কথোপকথনের চেষ্টা করলেও পেহেলগাম হামলা পরিস্থিতিকে নতুন করে জটিল করে তুলেছে।
দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ এখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই উত্তেজনাকে সংঘাতে রূপান্তরিত হওয়া থেকে রোধ করা।
সূত্র: রয়টার্স, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পাকিস্তান)